অনুলিখন: জেমস আব্দুর রহিম রানা |গণমাধ্যমকর্মী, যশোরঃ কেউ ইচ্ছে করে নিজের জীবনের ইতি ঘটায় না। ডিপ্রেশনের শেষ মুহূর্তটাতেও মানুষ নিজেকে আরেকবার বাঁচিয়ে নতুনভাবে শুরু করবার তীব্র আশা নিয়ে বেঁচে উঠতে চায়। উঠে দাঁড়ানোর একটা হাত চায়। ভরসা রাখবার জন্য একটা কাঁধ চায়।

কিন্তু নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবার একটা কারণও যখন আর অবশিষ্ট না থাকে তখনি মানুষ মুক্তি খুঁজে। যতটা না নিজে মুক্তি খুঁজে তারচেয়ে বহুগুণ বেশি অন্য সবাইকে মুক্তি দিতে চায়। আপনি, আমি শুধু আত্মহত্যা মহাপাপ এটা নিয়ে বড় বড় প্যারাগ্রাফ লিখতে জানি কিন্তু নতুন করে বেঁচে উঠার জন্য কারো ভরসার জায়গা হতে পারি না।

আত্মহত্যা মহাপাপ জেনেও যদি খোঁজ করেন আপনার অনেক আপন-জন পরিচিত মানুষকে দেখতে পাবেন ডিপ্রেশনের ভয়ংকর পরিস্থিতির মাঝ দিয়ে প্রতিনিয়ত নিজের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। তার নিজেকে গুটিয়ে রাখা, ডিপ্রেশনের কারণে তার শারীরিক মানসিক পরিবর্তন দেখে ঠাট্টা করছেন ঠিকই কিন্তু তার মনের কথাগুলো কখনো শুনবার চেষ্টা করছেন না। আচ্ছা বলুন তো সত্যিই কি কেউ আত্মহত্যা করে? নাকি আমরা তাদের হত্যা করি?

আত্মার মৃত্যু রোজ হয় তাদের কেবল আমরা খোঁজ রাখি না। চোখে পড়লেও পাশ কাটিয়ে যাই। কেবল লাশ হয়ে গেলে ভালবাসা দেখানোর শেষ হয় না। আর আত্মহত্যা করলে আত্মহত্যার পাপ কাহিনী নিয়ে বড় বড় স্ট্যাটাস দেই। খোঁজ নিলেই দেখা যাবে আত্মহত্যা মহাপাপ নিয়ে যারা বড় বড় পোস্ট দিছে, তাদের বেশিরভাগ মানুষ কারো না কারো মানসিক অশান্তির জন্য দায়ী। ডিপ্রেশন হতাশার জন্য দায়ী।

একটা মানুষের ডিপ্রেশন এর জন্য পরিবার কিংবা সমাজের কাছের মানুষ গুলোই দায়ী থাকে। তাদের প্রতিনিয়ত পাওয়া অবহেলা অভিযোগ, বুঝতে না পারায় আক্ষেপ থেকেই আত্মহত্যার প্রবনতা জন্মে।আত্মহত্যা যদি মহাপাপ হয় তবে আপনারা যারা ধীরে ধীরে আপনার পাশের মানুষটার দীর্ঘশ্বাসের কারণ হয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন আপনি সেই মহাপাপী।

মানুষের হতাশার কারণ না হয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছে জাগানোর মানুষ হোন। সত্যি বলছি সবাই বাঁচতে চায়। সুন্দর ভাবে বাঁচতে চায়। আত্মহত্যায় মারা যাওয়া প্রত্যেকটা মানুষ একসময় সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতো। তারা আত্মহত্যা করে নি, আমরা তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছি।

অনুলিখন: জেমস আব্দুর রহিম রানা।
গণমাধ্যমকর্মী, যশোর।